আরিফ নজরুলের তিনটি কবিতা

 

রঙিন দুঃখ

মাঝে মাঝে বেদনা রঙিন হয়, আকাশ জলে ভেসে

দুঃখরা সেতু বাঁধে নদীর মাঝখানে, নীরব ছন্দে

পিলার হয়ে দাঁড়াই আমি, তোমার পথ ধরে

কাদামাটির নরম আলোয় তুমি পার হবে বলে।


পাশের পিলারটি তুমি হওয়া উচিত ছিল, চাঁদের মতো নিখুঁত

অথচ বাতাসে উড়ে গেছে তোমার উপস্থিতির স্পন্দন

আমার কণ্ঠে নদীর ঢেউ গুনছে, রোদ-কণা ঝরে

সেতুর প্রান্তে আঁকা ছায়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্মৃতি।


তোমার চোখের আলোয় ধ্বনিত পাথরের হৃদয়

মেঘের কণার মতো ছিটকে গেছে শূন্যে

আমি দাঁড়িয়ে আছি, বৃষ্টি হয়ে ঝরে

তোমার নেই হওয়া শূন্যে ফুল ফোটে।


রঙিন দুঃখ, মধুর ব্যথা, বাতাসের ঝাঁপ

সেতুর নীরবতায় তুমি প্রতিধ্বনি হয়ে থাক

আমার দেহ হল পিলার, আমার আত্মা নদী,

যেখানে তুমি হও না, সেখানে আমি গাই তোমার গান।



বাতাসে ঝুলে থাকা ধুসর গন্ধ আমাকে ডাকে

রাত্রি যখন ভোর সাজায়—

নদীর গোপন আয়নায় জেগে ওঠে ধূসর চাঁদ

ইট-পাথরের শহর যেন হারানো উপকথার প্রাচীর

যেখানে কুয়াশা লিখে রাখে অদৃশ্য মন্ত্র।


জানালার কাঁচ ভেদ করে ঢুকে আসে আকাশ

ভেজা ডানায় বৃষ্টি বসায় অনন্ত প্রার্থনার ছাপ

আমি আর পাখি দাঁড়িয়ে থাকি সমুদ্রের কল্পনায়

বিশালতা আমাদের দৃষ্টিকে গ্রাস করে আবার ফিরিয়ে দেয়।


কিশোরী শরত দাঁড়িয়ে আছে বাতাসের আয়নায়

তার চুলে খেলে যায় ধানক্ষেতের ম্লান সোনালি আলো

শহরের কোলাহল ভেঙে সে শোনায় পুরাণের সুর

যেন গোপনে কুরুক্ষেত্র থেকে ফেরা রথচক্রের শব্দ।


বাতাসে ঝুলে থাকা ধুসর গন্ধ আমাকে ডাকে

যেন প্রাচীন দেবীর ছায়া ছুঁয়ে যায় হঠাৎ

শহর ও শরৎ মিলে যায় এক অবিনশ্বর কবিতায়

যেখানে ভোরের রঙে রাতের দেহ রূপ নেয় মিথ্যে ও সত্যে।



প্রজন্মের হাতে জ্বলছে সেই শিখা

রেইনট্রি গাছের গুঁড়ি এখনো রক্তের গন্ধে ভিজে

কোনো নদী এত কালো হতে পারে না, যতটা পদ্মা হয়েছিল লাশে ভরা

বাতাসের বুক থেকে উঠে আসে একাত্তরের আর্তনাদ—

মহাকাল যেন শঙ্খ বাজিয়ে বলে, নীরবতা হবে না।


মাটির নিচে শুয়ে আছে হাজারো শহীদ

তাদের হাড়ের ধ্বনি বাজে আগ্নেয়গিরির গর্জনে

নারীর চোখের জলে গড়ে ওঠে লৌহদেওয়াল

যেখানে প্রতিটি অশ্রুবিন্দু বিদ্রোহের তরবারি।


আমরা আর কোনো ষড়যন্ত্রকে মানচিত্র ছিঁড়তে দেবো না

আমাদের গলায় এখনো বজ্রের শপথ—

স্বাধীনতা কোনো বাজারের মুদ্রা নয়

এটি আত্মার অগ্নি, যা নিভে গেলে মহাজগৎও ভেঙে পড়বে।


প্রজন্মের হাতে জ্বলছে সেই শিখা

যা পৃথিবীর সমস্ত অন্ধকারকেই প্রতিরোধ করে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

  1. চমৎকার ভাষা,অসাধারণ শব্দচয়ন।
    অনেক শুভকামনা জানাই।

    উত্তরমুছুন