আজও অজেয় আমাজন রহস্য

 


সভ্যতার ছোঁয়ায় পৃথিবীর সব বিস্ময় আজ যতই আমাদের কাছে সহজে উন্মুক্ত হোক না কেন, প্রকৃতির অনেক রহস্যই এখনও তার অনেকটাই রেখে দিয়েছে নিজের কাছে। কোথাও অনেক নদী বয়ে গেছে, জলের ধ্বনি শোনা যায় শুধু, দেখা যায় না তারে। আবার কোথাও মানুষের মতোই মানুষ আছে, তাদের সাথে পৃথিবীর আর কারো যোগাযোগ নেই। এমনই নানান রহস্যের জটিল অঞ্চল অ্যামাজন। 

 
অ্যামাজনের নামের পেছনে আছে এক গল্প। স্প্যানিশ এক্সপ্লোরার ফ্রান্সিস্কো অরেল্লানাকে আক্রমণ করেন এক নারী যোদ্ধা। ফ্রান্সিস্কো সেই নারী যোদ্ধার নাম রাখেন অ্যামাজন, গ্রীক পূরাণের আমাজনের নামে। সেখান থেকেই কালক্রমে বন ও নদীর নাম হয় অ্যামাজন।
 
বিশ্বের সুমিষ্ট পানির বিশাল উৎস আছে অ্যামাজনে । অ্যামাজন নদীর পানির প্রবাহ বিশ্বের সবচেয়ে বড় অন্য ৮ টি নদীর পানির প্রবাহের সমষ্টির চেয়েও বেশি! অথবা অ্যামাজন রেইন ফরেস্টে আছে মিলিয়নেরও বেশি প্রজাতির জীব-জন্তু।  
 
জানা গেছে, নিউইয়র্ক শহরে ১২ বছরে যত পানি ব্যবহৃত হয় অ্যামাজন নদীতে তার চেয়েও বেশি পানি প্রবাহিত হয় একদিনে। পৃথিবীর তাবৎ পরিচ্ছন্ন পানির ২০ ভাগ বয়ে চলে এই নদীতে।

অ্যামাজন এতই বিশাল জীব বৈচিত্রে পরিপূর্ণ বন যে এর একটিমাত্র লতা গুল্মে থাকতে পারে বহু প্রজাতির পিপড়া। এত পিঁপড়া যা হয়ত সমগ্র ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জে নেই! 
 
এক অ্যামাজনে আছে ৩০০০ প্রকারের ফল। তবে খাওয়ার যোগ্য ফল আছে মাত্র ২০০ প্রকারের। 
 
এই বনে ১০ মিলিয়ন প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে আছে ৪০,০০০ প্রজাতির গাছ, ১৩০০ প্রজাতির পাখি, ৩০০০ প্রজাতির মাছ, এবং ২.৫ মিলিয়ন ভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড়।
 
একসময় হেনরি ফোর্ড অ্যামাজনে রাবার চাষের উদ্দেশ্যে একটি ওয়ার্ক হাউজ তৈরি করেন। এখন সেই ফোরলান্ডিয়া পরিত্যাক্ত ভুতের বাড়ি হিসেবে পরিচিত।
 
৩০০ পাউন্ড ওজনের আরাপাইমাম মাছ বাস করে অ্যামাজনে। এর গায়ের চামড়া বর্মের মত শক্ত যার কারণে সে নিরাপদ থাকে মাংসাশী পিরানহার কামড় থেকে। 
 
সাহারা মরুভূমি থেকে প্রতি বছর ৪০ মিলিয়ন টন বালি উড়ে আসে অ্যামাজনে!  

অ্যামাজনে এমন অনেক আদিবাসী গোষ্ঠী আছে বহির্বিশ্বের সাথে যাদের কোন সংযোগ নেই। কিছু বিজ্ঞানী আছেন যারা চান না এদেরকে আবিষ্কার করা হোক। 
 
বলা হয়, অ্যামাজন একটি দৈত্যাকৃতি ফলের বাগান যা বিকশিত হয়েছে ৩০০০ বছর আগে। 
 
অ্যামাজন নদী থেকে এত পরিমাণে সুমিষ্ট পানি সমুদ্রে গিয়ে মেশে যে প্রায় ১০০ মাইল পর্যন্ত সমুদ্রের পানি কম লবণাক্ত থাকে। 
 
অ্যামাজন নদীর মুখ এতই বিশাল যে তা এর নিকটবর্তী দ্বীপ মাজারিওকে ডুবিয়ে দেয়। জানাগেছে, মাজারিও এর আকৃতি সুইজারল্যান্ডের সমান। 
পৃথিবীর অক্সিজেনের ২০% আসে অ্যামাজন বন থেকে। 
 
বিজ্ঞানীরা টেরা পেটা বা কালো মাটির সন্ধান পেয়েছেন যা অ্যামাজনের বেশ বড় অংশকে ঢেকে রেখেছে। তারা মনে করেন এখানে গড়ে ওঠা সভ্যতা এই মাটির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। 
 
অ্যামাজনের নদী একসময় প্রবাহিত হত প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে। গতিমূখ বদলে এটি এখন প্রবাহিত হয় আটলান্টিক মহাসগরের দিকে!
 
অ্যামাজনের অধিবাসীরা এখনও তেমনই জীবনযাপন করছেন যেমনটা ২০ হাজার বছর আগে তাদের পূর্বপুরুষরা কাটাতেন। আমাজনের গভীর জঙ্গলে হেলিকপ্টার নিয়ে উড়েছেন ফটোগ্রাফার রিকার্ডো স্টুকের্ত। আর তখনই বেরিয়ে এসেছে এই গোত্রটির খবর। এরাই সম্ভবত শেষ অজানা এক গোত্র যাদের কথা একেবারেই জানত না পৃথিবী। 
 
পৃথিবী ও পৃথিবীর অন্য প্রান্তের যতকিছুই আবিস্কার হোক, এখনও এইসব বিস্ময়ের সীমা নেই। পৃথিবী শব্দের সমার্থক দুনিয়া শব্দের আগে তাই আজব শব্দটি যথাযথই। 
 
তথ্য ও ছবি – ইন্টারনেট । 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ