Header Ads Widget

পলাশীর ‍যুদ্ধ ও ‘মীরজাফর’দের করুণ পরিণতি


নাসির আহমেদ কাবুল

যুগে যুগে সব দেশেই মীরজাফর জন্ম নিয়েছে। তাদের পরিণতি কারো শুভ হয়নি। ব্যক্তিগত শত্রুতা থেকে শুরু করে দেশের সঙ্গে শত্রুতা করে মীরজাফরা তাদের স্বার্থ হাসিল করে থাকে। মীরজাফর একা তৈরি হয় না,  প্রভাবশালী ব্যক্তি বা কুচক্রী মহল নিজের কূটকৌশলকে কাজে লাগাতে যাদেরকে  ব্যবহার করা হয়, ইতিহাস তাদেরকেই মীরজাফর  বলে থাকে। অর্থের বিনিময়ে বা ক্ষমতায় লোভে মীরজাফররা  বেইমানি করে থাকে। তবে  মীরজাফরদের শেষটা কখনোই ভালো হয় না।  আমরা পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজদ্দৌলার সঙ্গে তার প্রধান সেনাপতি মীরজাফর আলী খান, যার নাম অনুসারে পরবর্তীকালে  বাংলায় ‘মীরজাফর’ ঘৃণিত শব্দ তৈরি হয়। শুধু প্রধান সেনাপতি মীরজাফর নয়, নবাবকে সিংহাসন থেকে সরাতে যারাই বেইমানি করেছিল তাদের প্রত্যেকের পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ হয়েছিল।  

২৩ জুন, ১৭৫৭ সাল। এদেশের ইতিহাস সম্পর্কে যারা সামান্যও পড়েছেন, তারাও নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা এবং পলাশী যুদ্ধ সম্পর্কে বেশ অবগত আছেন।  আজ থেকে ২৬৩ বছর আগে ২৩শে জুন পলাশীর আম্রকাননে কীভাবে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয় এবং পরবর্তীতে কীভাবে উপমহাদেশকে দু’শো বছর সেই গোলামীর গ্রানি বয়ে বেড়াতে হয়েছে তা নিয়ে আলাপ করব না। যুদ্ধের কাহিনী যেহেতু আমাদের সবারই কম বেশি জানা, তাই সেদিকে না গিয়ে কেবল দুইটা বিষয় নিয়ে একটু আলাপ করব।

প্রথমত; নবাব সিরাজকে নাটক উপন্যাসের মাধ্যমে যেভাবে ইতিহাসের ভিলেন বানানো হয়েছে, আসলে তা কতটুকু ঠিক বা যুদ্ধের পর তার পরিবার ও অনুচরদের সাথে কি রূপ ব্যবহার করা হয়েছে তা নিয়ে সামান্য বলবো। পাশাপাশি যাদের কারণে পলাশীর পরাজয়, পরবর্তিতে তাদের কি করুণ পরিণতি হয়েছিলো তা আলাপে নিয়ে আসবো।

নবাব আলীবর্দী খাঁ

ভূমিকা না বাড়িয়ে শুরু করি- ইতিহাস সম্পর্কে যারা সচেতন তারা সবাই জানেন ইংরেজদের সাথে পলাশীর প্রান্তরে যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার সময় নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার বাহিনী ছিল ৫০,০০০ হাজার আর রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে ইংরেজ বাহিনী ছিল মাত্র ৩৫০০ এর কাছাকাছি। নবাবের হাতে যে বিপুল সৈন্যসংখ্যা ছিল তা দিয়ে ইংরেজদের এদেশ থেকে বিতাড়িত করা অসম্ভব কাজ ছিল না। এমনকি মীরজাফরের অধীনস্ত যে ১৬০০০ সৈন্য ছিলো, তারাও যদি যুদ্ধে অবতীর্ণ হতো তাহলে নবাবের বিজয় অর্জন একেবারেই স্বাভাবিক ছিল। মীর জাফর থেকে শুরু করে পরাজয়ের জন্য আরও যারা বিশ্বাসঘাতকতা করে পিছনে কলকাটি নেড়েছে তাদের নিয়ে পরে আলাপ করব।

এখন একটা প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠে সৈন্য সংখ্যা, অস্ত্রভান্ডার, রসদ ও বাহন বিদেশিদের তুলনায় অনেক বেশি, তাছাড়া আপন প্রকৃতি, পরিবেশ সবই ছিল নিজেদের অনুকুলে তথাপি এই ঐতিহাসিক পরাজয় কেন হয়েছিলো? জাতির মধ্যে অনৈক্য এবং ক্ষমতালোভী স্বার্থান্বেষী বিশ্বাসঘাতক গোষ্ঠীদের ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি একটা মহল বিশেষ করে নাটক-সিনেমায় নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে অত্যাচারী, নারী লোভী, মাতাল এবং আরো অনেক দোষে দোষী সাব্যস্ত করে। এবং এটাও একটা কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়। তরুণ যুবক সিরাজের কিছু দোষ ত্রুটি থাকাই স্বাভাবিক, অস্বাভাবিক কিছু নয়। সত্যিকারভাবে ইতিহাসের বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, এগুলো অতিরঞ্জিত।

ঘষেটি বেগম

সিরাজের নানা আলীবর্দী খান ইন্তেকাল করেন ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ৯ এপ্রিল, নানার মৃত্যুর পরই তো সিরাজ উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতায় আসে। আর পলাশী যুদ্ধে সিরাজের পতন ঘটে ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন, অর্থাৎ ১৪ মাস ১৪ দিন পর। এই ১৪ মাস ১৪ দিন, তাকে চর্তুদিকে ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়েছে। কিশোর সিরাজউদ্দৌলা ক্ষমতায় বসেই এই ১৪ মাসে কমপক্ষে ১২০০ মাইল দুর্গম পথ তাকে অতিক্রম করতে হয়েছে। সে সময়ে ছিলো না কোনো উন্নত যানবাহন। করতে হয়েছে পাঁচ, পাঁচটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। চর্তুদিকে অসংখ্য ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করতে হয়েছে। তাকে তো আলেকজান্ডারের চেয়েও দ্রুতগতিতে পথ চলতে হয়েছে। রাত কাটাতে হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্রে ও অশ্বপৃষ্ঠে। দিন কাটাতে হয়েছে ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে।

রবার্ট ক্লাইভ

নানাজীর উদ্যোগে সেই অল্প বয়সে বিবাহিত সিরাজের তখন আপন স্ত্রী লুৎফা, শিশুকন্যা জোহরারও প্রতি ফিরে তাকাবারও তো ফুরসত ছিল না। নাটকে আলেয়া নামের আর্য সুন্দরীদের মোহাবিষ্ট জালে রূপাকৃষ্ট পতঙ্গের মতো লাম্পট্য লীলায় সময় কাটাবার সুযোগ তিনি পেলেন কোথায়? এগুলো আমরা একটু গভীরভাবে উপলব্ধি করলেই তো বুঝতে পারার কথা। কেবলমাত্র সিরাজের প্রতি নিষ্ঠুরতাকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য হতভাগ্য নবাবের চরিত্রহনন করা হয়। নানা ধরনের মিথ্যাচারের মাধ্যমে কলঙ্কিত করা হয় তরুণ নবাবকে। নিষ্ঠুরতা ভয়াবহ কতটা জঘন্য ছিল তা আলোচনা থেকেই বেরিয়ে আসবে।

মীর জাফর আলী খান

মোহাম্মদী বেগ, মীরনের নির্দেশে সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। সিরাজকে হত্যার পর তার পত্নী লুৎফুন্নেসাকে চরমভাবে লাঞ্ছিত করে সে। নবাব সিরাজের সঙ্গে তিনিও ধরা পড়েছিলেন তার একমাত্র কন্যা উম্মে জোহরাসহ ১৭৫৭ সালের ২৪ জুন। ধরা পড়ার পর লুৎফুন্নেসার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। মুর্শিদাবাদের জেলখানায় ধারাবাহিক নির্যাতনে তিনি মৃতপ্রায় হয়ে যান। ১৭৫৮ সালে কন্যাসহ বন্দি বেগম লুৎফুন্নেসাকে ঢাকায় পাঠিয়ে বন্দি করে রাখা হয় জিঞ্জিরা প্রাসাদে। এখানে মা ও মেয়ে প্রায় আট বছর বন্দি থাকেন।

নির্লজ্জভাবে পিতা মীরজাফর ও পুত্র মীরন উভয়েই লুৎফুন্নেসাকে বিয়ে করার জন্য জোরজবরদস্তি করতে থাকে। কিন্তু এই মহীয়সী নারী উভয়ের প্রস্তাব ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করেন।


১৭৬৫ সালে তিনি মুক্তি পেয়ে কন্যাসহ মুর্শিদাবাদ ফিরে আসেন। এবং অতি দীনহীনভাবে জীবন কাটাতে থাকেন। ১৭৯০ সালের মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি স্বামী নবাব সিরাজের কবরগাহে তসবিহ, তাহলিল, তেলাওয়াত, দু’আ, দরুদ পাঠ করেই কাটান। মুর্শিদাবাদের তৎকালীন অধিবাসীরা একজন বেগমের প্রতি নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতা অশ্রুসিক্ত নয়নে দেখেছে।

সিরাজের অনুগত, দেশপ্রেমিক সেনাপতি ও আমত্যদেরও একে একে হত্যা-নির্যাতনের শিকারে পরিণত করা হয়। ষড়যন্ত্রকারী রায়দুর্লভ বিষ প্রয়োগে হত্যা করেন অকৃত্রিম সিরাজভক্ত মোহনলালকে। খাজা আবদুল হাদি খানকে মীরজাফর মেরে ফেলেন বিশ্বাসঘাতকতা করে। সিরাজ অনুগত ঢাকার ভূতপূর্ব নায়েব রায় বল্লভ সেনকে গঙ্গার জলে ডুবিয়ে মারা হয়। পাটনার নায়েব, আরেক সিরাজ সুহৃদ, রামনারায়ণকেও খুবই নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হয়। মোটের ওপর, পলাশীর যুদ্ধের ২০ বছরের মধ্যে প্রায় সকল সিরাজ অনুগত সেনাপতি, আমীর-ওমরাহকে সমূলে নিশ্চিহ্ন করা হয়।

একটা কথা বার বার উচ্চারিত হয়, পলাশীর ঐতিহাসিক ঘটনা থেকে আমরা শিক্ষা নিই নাই। শিক্ষা নেয়া আর না নেয়া নিয়ে আমার কিছু বলার নেই, কারণ ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নেয়া বাঙালির মজ্জাগত ব্যাপার। তাই আমি কেবল এত নির্যাতন, নিপীড়ন চালানোর কুশলীব যারা ছিলেন, তাদের কি পরিণতি হয়েছিলো তা তুলে ধরছি, এতে যদি কেউ শিক্ষা নিই আর কি। বর্তমান ও ভবিষ্যতে পর্দার আড়ালে এমন কিছু করার আগে যেন হাজার বার ভাবতে হয়।

মহান সৃষ্টিকর্তার যে সবকিছুর বিচার করেন, তা আমরা পলাশীর প্রেক্ষাপট তৈরির খলনায়কদের নির্মম পরিণতি দেখে কিছুটা হলেও বুঝতে পারি। সিরাজের হত্যাকারী মোহাম্মদী বেগ উন্মাদ অবস্থায় দাম্পত্য কলহে এক কূপে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। মীরনের মৃত্যু ঘটেছিল বজ্রপাতে।

তার আগে সিরাজের খালা ষড়যন্ত্রকারী ঘসেটি বেগমকে মীরণ প্রবল খরস্রোতা বুড়িগঙ্গায় নৌকা ডুবিয়ে মেরে ফেলে। মীর জাফর ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে দু’দুবার বাংলার মসনদে বসেছিলেন। কিন্তু শেষ বয়সে মারাত্মক কুষ্ঠ ব্যাধিতে তার ভবলীলা সাঙ্গ হয়।

মীর কাশিম আলী খান পরবর্তীতে বাঙলার নবাব হয়েছিলেন; কিন্তু শুরুতেই তিনি ছিলেন বাংলার মুসিলম শাসন অবসানের মূল ষড়যন্ত্রের অন্যতম সহযোগী। ভগবান গোলায় নবাবকে তিনি সর্বপ্রথম ধরিয়ে দেন তার শ্যালক মীরনের হাতে। শেষ পর্যায়ে এসে মীর কাশিম অনুধাবন করলেন একদা এই চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে তিনি বাঙলার মুসলমানদের স্বার্থের চরম ক্ষতি সাধন করেছেন, এখন আর কোনো উপায় নেই।

মীর কাশিম বুঝলেন ঠিকই, কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু মূল ষড়যন্ত্রকারীরা কি চিরকালই পর্দার অন্তরালে থেকে যাবে? মুঙ্গেরের দুর্গশীর্ষ থেকে বস্তায় ভরে গঙ্গার বুকে তিনি নিক্ষেপ করেন জগৎশেঠ আর রায়দুর্লভের জীবন্ত দেহ। অপর এক অপঘাতে নিহত হলো রাজা রাজ বল্লভ। পরবর্তীকালে তার সব কীর্তি পদ্মা নদী গ্রাস করে কীর্তিনাশা নামধারণ করলো। কিন্তু এত করেও মীর কাশিম তার শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর ইংরেজ কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে বনে জঙ্গলে আত্মগোপন করেই রইলেন। জঙ্গলেই তার দুই ছেলে নিহত হন। নির্বংশ মীর কাশিম আলী খান এরপর কোথায় উধাও হয়ে যান ইতিহাস সে সম্পর্কে নীরব। দীর্ঘ দিন পর তার লাশ পাওয়া যায় দিল্লির আজমেরি গেটের কাছে রাস্তার ওপরে।

ষড়যন্ত্রকারীদের ইংরেজরা প্রায়ই প্রচুর অর্থবিত্ত এবং পদক, পদবি দিয়ে তুষ্ট করত বলে জানা যায়। এ রকম এক পদক বিতরণী অনুষ্ঠানে হাজির হয়েও পদকপ্রাপ্ত হিসেবে ডাক না পাওয়ায় অপমানে, ক্ষোভে সভাস্থলে উমিচাঁদের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। নন্দকুমার ভূষিত ছিল মহারাজা উপাধিতে কিন্তু ওয়ারেন হেস্টিংসের সাজানো মামলায় আসামি হিসেবে তাকে শেষ পর্যন্ত শেওড়া গাছে ঝুলতে হয় ফাঁসি কাষ্ঠে।

ইয়ার লতিফ নিরুদ্দেশ হয়ে গোপনে মৃত্যুবরণ করেন। রায় দুর্লভ ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে কারাগারে ধুকে ধুকে মারা গেছেন। স্ক্র্যাপ্টন বাংলায় লুটপাট করে বিলেতে ফেরার পথে জাহাজ ডুবিতে মারা যায়। ওয়াটসন কোম্পানির চাকরি থেকে বরখাস্ত হয়ে মনের দুঃখে ও অনুশোচনায় ক্রমাগত অসুস্থ হয়ে কোনো ঔষুধে প্রতিকার না পেয়ে শোচনীয়ভাবে মৃত্যু বরণ করেন।

এভাবেই দেখা যায় বাংলার মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী ভূমিকা পালনকারীদের ইতিহাস কাউকেই ক্ষমা করেনি, চক্রান্তকারীদের ভোগ করতে হয়েছে মর্মান্তিক পরিণতি।

শেষ করি সেই প্রথম দিকের কথা দিয়ে, অবশ্য এটা সবারই জানা কথা। তাহলো, এত সৈন্য, শক্তি-সামর্থ থাকার পরেও কেন পলাশীর প্রান্তরে মুসলিমদের শোচনীয়ভাবে পরাজয় হয়েছিলো?

কারণটা ইতিহাসবিদ উইলিয়াম ড্যালরিম্পল এর মুখেই শুনুন, তার লেখা নতুন বই ‘দ্য অ্যানারকি: দ্য রিলেন্টলেস রাইজ অব দ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ এ নিয়ে লিখেন, “অলস বাঙালিদের জন্যই পলাশী যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলা হেরে গেছেন।”

এই বিষয়ে রবার্ট ক্লাইভ তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, “সে দিন স্থানীয় অধিবাসীরা ইংরেজদের প্রতিরোধ করতে চাইলে লাঠিসোটা আর হাতের ইটপাটকেল মেরেই তাদের খতম করে দিতে পারতো। কিন্তু এ দেশবাসীরা তা উপলব্ধি করতে পারেনি। যেকোনো কারণেই হোক সে দিন বাংলার মানুষ এগিয়ে যায়নি। তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার তখন খুবই অভাব ছিল।”

পলাশীর ট্র্যাজেডির পরেও বাংলার সাধারণ মানুষ, কৃষক সমাজ দৈনন্দিন জীবন, নিত্যদিনের মতোই মাঠে কৃষি কাজ করেছে। ফসল বুনেছে। অথচ পলাশীর যুদ্ধে গোটা জাতীয় জীবনে কি নিদারুণ ভাগ্য বিপর্যয় ঘটলো, এক ঘণ্টার প্রহসনের যুদ্ধে গোটা জাতির স্বাধীনতা হরণ করে নিয়ে গেল গোটা কয়েক বেনিয়া ইংরেজ অথচ তাদের কারো টনক নড়লো না।

টনক যখন নড়লো, তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাদের আর তখন কিছুই করার ছিল না। অবশ্য তার একশো বছর পর প্রথম শক্তভাবে রুখে দাঁড়াতে সক্ষম হয় বাংলার কৃষক সমাজ। 

সিরাজউদ্দৌলা কখনো তার দেশের প্রজাদের সাথে কোনো অবস্থাতেই বিশ্বাসঘাতকতা করেনি। কখনো স্বেচ্ছায় স্বদেশকে বিকিয়ে দেননি। তার চরিত্রেও কোনো কালিমা ছিলো না। পলাশীর প্রান্তরে মর্মান্তিক নাট্যমঞ্চে এক মাত্র তিনি ছিলেন মূল নায়ক। সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাঙলার স্বাধীনতার শেষ প্রতীক।

লেখক : কবি ও কথাসাহিত্যিক


তথ্যসূত্র:

১. 100 Decisive Battles: From Ancient Times to the Present by Paul K. Davis (1999).

২. Ali Vardi and His Times by K. K. Datta (1939)

৩. ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীনতার অবসান এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়সমূহ – ড. মাহফুজ পারভেজ

৪. মোজাফ্ফরনামা: নবাব আলিবর্দি খান থেকে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা

৫. সিরাজের পুত্র ও বংশধরদের সন্ধানে -অমলেন্দু দে

৬. পলাশী থেকে বাংলাদেশ

৭. Sirajuddaula by Sushil Chaudhury and KM Mohsin (2012)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ