লন্ডনের চিঠি : ব্রিটিশ বলে নির্দিষ্ট কোনো জাত নেই!
হুসনুন নাহার নার্গিস ।।
যেখানে খাদ্য, যেখানেই আশ্রয় সেখানেই ছুটে যাওয়া।
ব্রিটেনে ব্রিটিশ কে তা খুঁজতে গেলে দেখা যায় ব্রিটিশ বলে কোনো একটা জাত নয় । তারা অ্যাঙ্গলো স্যাক্সন জার্মান থেকে এসে বসবাস করা মানুষ আর ফ্রান্স এর উত্তর থেকে আগত নরম্যান্ডি, যারা নরওয়ে থেকে আসা ভাইকিং তাদের মিলিত ধারা। এরাই এখন ব্রিটিশ বলে পরিচিত। ব্রিটেনে নানান দেশ থেকে মানুষ এসে বসবাস করছে। ইউরোপ ,আফ্রিকা, এশিয়া থেকে আগত প্রায় সব দেশের মানুষ আছে এখানে।
নানান ভাষাভাষী, কালচার আর ধর্মের মানুষ এখানে হারমনির সাথেই বসবাস করে।
বাংলাদেশ থেকে মানুষ এখানে প্রায় ছয় জেনারেশন ধরে আছে। প্রথমে আসে শুধুমাত্র পুরুষ। পরিবার নিয়ে আসে নাই। তাদের ইচ্ছা ছিল কিছু টাকাপয়সা জমিয়ে দেশে ফেরত যাবে। কিন্তু সেই যাওয়া আর হয় না। দেশে বাড়ি ঘর বানালেও তা পড়ে থাকে। কারণ যখন ঘোষণা আসে পরিবার না আনলে পরে তারাকে আর নিয়ে আসা যাবে না। তখন দলে দলে সবাই দেশ থেকে স্ত্রী—পুত্র কন্যা নিয়ে আসে। ফলে বাংলাদেশী কমুইনিটির বসবাস এখানে অনেক পুরানো।
প্রায় ছয় লাখ বাংলাদেশী ব্রিটেনে আছে। বর্তমানে অনেকে ছাত্র হিসেবে এসে বা এসাইলাম শিকার হিসেবে এসে এখানে থেকে গেছে। পেছনে কারণ দারিদ্রতা বা দেশে কাজের অভাব।
ইমিগ্রান্ট বা বাইরের দেশ থেকে এসে বসবাস করাটা খুব সহজ নয়। একজন ইমিগ্রান্টকে প্রতিনিয়ত নিজেকে স্যাটেল করার জন্য নিজেকে যুদ্ধ করে যেতে হয়। অপরিচিত মানুষ, সমাজ, কালচার, ভাষা, নিয়মনীতি অর্থাৎ একটি দেশের পুরো সিস্টেমের সাথে খাপ খাওয়ার জন্য নিজেকে নতুন করে তৈরি করতে হয়। সর্বোপরি অর্থ আয়ের জন্য কাজ পাওয়া সবচেয়ে বড়ো যুদ্ধ। অর্থ না হলে খেয়েপরে বেঁচে থাকা তো সম্ভব নয়।
একটি দেশে ইমিগ্রান্ট হওয়ার পর অনেক মানুষ মানসিক রোগে ভোগে। ডিপ্রেসান, অ্যাংজাইটি এবং হোমসিক দেখা দায় তাদের মধ্যে। এর মূল কারণ একলা হয়ে পড়া। মাইগ্রেসান ব্যাপারটি একটা মানুষের জীবনে কঠিন পদক্ষেপ। তা যদি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হয় তবে তা আরও কঠিন হয়ে যায়।
মাইগ্রেন্টদের মানসিক জোর অনেক সময় একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। নতুন দেশে আগের পড়াশুনা তেমন কাজে লাগে না। মানুষ ভেঙ্গে পড়ে। তার উপরে যদি দেশের রেখে আসা মানুষ ক্রমাগত ভাবে অর্থনৈতিক চাপ দিতে থাকে বা দেশে গেলে রেখে আসা পরিবার ওয়েলকাম না করে বা তাদের কষ্ট বুঝতে না চায় বা যে আকুলতা নিয়ে যায় তা উপেক্ষা করে সেই কষ্ট তাদেরকে মানুষিকভাবে এতো বেশি করে যা সহ্য করা দুরূহ বটে। তখন তারা নিজ দেশে যেমন আন—ওয়েলকাম আবার মাইগ্রেন্ট করা দেশটিতেও বিলংস মনে করে না। এই টানাপূরণ তাদেরকে অসহায় করে তোলে এবং মানসিক কষ্টের অন্যতম প্রধান কারণ। এমন কি তাদের ফিলিংস বুঝতে পারে না ফেলে রাখা আসা আপন আত্মীয় স্বজন। এ এক নিদারুণ বেদনা; যা তারা নিয়ে বেড়ায় বাকি জীবন ধরে।
পরের পর্বে ব্রিটেনে মাইগ্রেন্ট হয়ে আসা কিছু মানুষের ভোগান্তি ও রূঢ় অভিজ্ঞতা শেয়ার করার প্রতিশ্রম্নতি রইল। সঙ্গে থাকুন।
চলবে
হুসনুন নাহার নার্গিস